History of the institution

চরকালেখান নেছারিয়া কামিল মাদরাসা, মুলাদি, বরিশাল একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলার একটি প্রখ্যাত নেছারিয়া মাদরাসা। মাদরাসাটি ইসলামিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইতিহাস: চরকালেখান নেছারিয়া কামিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠা ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত।  প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই মাদরাসাটি ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা প্রদানেও উদ্যোগী। এটি একটি "কামিল" মাদরাসা, অর্থাৎ এখানে উচ্চতর ইসলামিক শিক্ষা প্রদান করা হয়, যেমন কুরআন,  হাদিস, ফিকহ, এবং অন্যান্য ইসলামিক বিষয়ের গভীর পাঠদান।

মাদরাসাটি শুরু থেকেই এলাকার মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। এখানে কেবল ধর্মীয় শিক্ষাই প্রদান করা হয় না, বরং শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত ও নৈতিক চরিত্র গঠনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি, সেমিনার, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও এই মাদরাসাটি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।

বর্তমানে, চরকালেখান নেছারিয়া কামিল মাদরাসা বরিশাল জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাদরাসা হিসেবে পরিচিত, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ইসলামিক শিক্ষা গ্রহণ করছে।

১. প্রতিষ্ঠার পটভূমি
চরকালেখান নেছারিয়া কামিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় মূলত ইসলামিক শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী নেছারিয়া মাদরাসা, যেখানে "নেছারিয়া" শব্দটি ছারছিনা দরবার শরীফের মরহুম পীর শাহ সূফি নেছার উদ্দিন  আহমদ (র) এর নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়।
মাওলানা আফসার উদ্দিন আকন, মো: কদম আলী তালুকদার সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে ছারছিনার মরহুম পীর সাহেব কে অত্র এলাকায় আনেন এবং তিনি ই  এই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করনে। পরবর্তীতে এই মাদরাসাটির হাল ধরেছেন তাদের মধ্যে  মরহুম জমশেদ আলী তালুকদার,  আব্দুর রহমান আকন, মোঃ জানে আলাম তালুকদার, মোঃ নুরে আলম তালুকদার, মোতাহার হোসেন বাচ্চু সরদার, মোঃ শাহ আলম আকন, হাজি মোঃ মহসিন খান সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

২. শিক্ষার বিভিন্ন স্তর
এই মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চতর স্তরের শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এখানকার পাঠ্যক্রম ইসলামী শিক্ষা ভিত্তিক হলেও আধুনিক শিক্ষাও সমান গুরুত্বের সাথে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যেমন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেদের উন্নতি সাধন করে, তেমনি সমাজে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।

৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
মাদরাসাটি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও ব্যাপক অংশগ্রহণ করে। এখানকার শিক্ষকরা এবং শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে সামাজিক সেবা, ত্রাণ বিতরণ, রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্য ক্যাম্প ইত্যাদি আয়োজন করে। এতে করে এলাকার মানুষের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক সম্মানিত হয়ে উঠেছে।

৪. মাদরাসার অবকাঠামো
এবং পরিবেশ
 অত্র মাদরাসায়  প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে আসছে। শিক্ষক ও কর্মচার মিলে ৩৪ জন স্টাপ রয়েছে। অত্র মাদরাসায় বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা রয়েছে।
ভবনঃ মাদরাসা টি তে চার তলা ভবন  ১টি,  এবং দ্বিতল ভবন ২ টি এছাড়াও  টিনসেট চারটি এবং আদাপাকা ১টি ভাবন রয়েছে,  ১ টি খেলার মাঠ, ১টি মসজিদ, ১ টি পুকুর রয়েছে।  পাশেই রয়েছে মাদরাসা বাজার, স্কুল ও কলেজ।
মাদরাসাটি তার সুশৃঙ্খল অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের জন্য পরিচিত। এখানে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়ে থাকে, এবং মাদরাসার পরিবেশ সুশৃঙ্খল, পরিচ্ছন্ন এবং অধ্যয়ন মনোযোগী। বর্তমান সময়ের আধুনিক সুবিধাদি যেমন লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব, সহায়ক পাঠ্যপুস্তকসমূহ ইত্যাদি ছাত্রদের শিক্ষা-গবেষণার জন্য উপযোগী।এ ছাড়াও আবাসিকের জন্য রয়েছে ছাত্রাবাস।

৫. উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
বর্তমানে মাদরাসাটি ইসলামী শিক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং মানবিকতা প্রসারে নিজের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও শিক্ষকমণ্ডলী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের দিকে মনোযোগী এবং মাদরাসাটির ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য নতুন সুযোগ-সুবিধা যোগ করার পরিকল্পনা করছে।

এছাড়া, মাদরাসাটির শিক্ষার মান ও পরিবেশ দিন দিন উন্নত হচ্ছে, এবং এটি এলাকার মধ্যে একটি বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

৬. অংশীদারি ও পরিচালনা
চরকালেখান নেছারিয়া কামিল মাদরাসা পরিচালিত হয় একটি শক্তিশালী কমিটির মাধ্যমে, যার মধ্যে শিক্ষক, গভার্ণিংবডি এবং অভিভাবকরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এখানে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি, মাদরাসার উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রভাবিত বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হয়।

৭. প্রকাশনা ও গবেষণা
মাদরাসাটি ইসলামী বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা, যেমন পুস্তিকা, সংবাদপত্র, তাফসির ও হাদিস সম্পর্কিত বই ইত্যাদি প্রকাশ করে। এছাড়াও, এটি ইসলামিক গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

ভৌগোলিক অবস্থান:
জেলা: বরিশাল
উপজেলা: মুলাদি
গ্রাম: চরকালেখান (মুলাদি উপজেলায়)
অবস্থান: মাদরাসাটি মূলত মুলাদি উপজেলার উত্তরে অবস্থিত, যা বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৪৫-৫০ কিলোমিটার দূরে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
বরিশাল শহর থেকে মুলাদি উপজেলায় যাওয়া সহজ, এবং এই মাদরাসাটির অবস্থান মুলাদি উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত। স্থানীয় সড়ক পথে মাদরাসাটিতে যাওয়া যায়, এবং কাছাকাছি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও রিকশা সার্ভিস রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক।

এছাড়াও, মুলাদি উপজেলা বরিশালের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে যুক্ত, এবং বরিশাল শহর থেকে মুলাদি উপজেলায় আসার জন্য বাস বা প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করা যায়।

 মুলাদি উপজেলার সীমানা ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিল, যা স্থানীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চরকালেখান গ্রাম:
চরকালেখান একটি ছোট গ্রাম, যা মুলাদি উপজেলার অন্তর্গত। এই গ্রামটি বরিশাল শহর থেকে একটু দূরে অবস্থিত হলেও এর যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো। মাদরাসাটি মূলত এই গ্রামের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যেখানে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব।

মাদরাসার স্থান:
মাদরাসাটি মুলাদি উপজেলার চরকালেখান গ্রামে অবস্থিত, যা স্থানীয় জনগণের জন্য খুবই পরিচিত।
এখানে সাধারণত স্থানীয় ছাত্ররা পড়াশোনা করে থাকে, তবে পার্শ্ববর্তী এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরাও এই মাদরাসাতে ভর্তি হন।
প্রকৃতির সৌন্দর্য:
চরকালেখান অঞ্চলের চারপাশের প্রকৃতি বেশ সুন্দর। এখানে বিস্তীর্ণ মাঠ, নদী, খাল ও পুকুর রয়েছে। বিশেষত, বরিশালের নদীভাঙন বা জলবায়ুর পরিবর্তন এই অঞ্চলের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, তবে বর্তমান সময়ে এলাকার জীবনযাত্রা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা ভালো পর্যায়ে রয়েছে।